টাকার জন্য যুবলীগ নেতার মারধর, অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা
Published on Friday, February 12, 2021 at 2:52 pm
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ‘টাকার জন্য প্রকাশ্যে গালিগালাজ ও মারপিটের অপমান সহ্য করতে না পেরে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আমি আত্মহত্যা করলাম।’
আত্মহননের আগে এক ভিডিও বার্তায় এমনটিই বলে গেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের সনগাঁও গ্রামের নেনকু মোহাম্মদের ছেলে আব্দুর গফুর।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে জেলার সনগাঁও গ্রামে মাত্র এক হাজার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাকে স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা জমির উদ্দীন মারধর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ সময় মারধরের ভিডিও করা হয়েছে বলেও স্থানীয়দের পক্ষ থেকে জানানো হয়। পরে অভিমান সইতে না পেরে গফুর আত্মহত্যা করেন।
নিহত মাছ ব্যবসায়ী আবদুল গফুরের স্ত্রী রোজিনা বেগম বলেন, আজ সকালে পাশের গ্রামের পয়জার আলীর ছেলে যুবলীগ নেতা জমির উদ্দীন দু’বার পাওনা টাকা চাইতে বাড়িতে আসেন। আমার স্বামীকে না পেয়ে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।
মোবাইল রিসিভ না হলে বাড়ি থেকে রেগে বেরিয়ে যান। এরপর স্থানীয় বাজারে দেখা হলে প্রকাশ্যে লোকজনের সামনে তাকে (গফুর) মারপিট করেন। অপমান সহ্য করতে না পেরে আমার স্বামী বাসায় আসার আগেই গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন’, বলেন রোজিনা বেগম ।
গফুরের প্রতিবেশী নাসিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গফুরকে বাঁচানোর জন্য প্রথমে বালিয়াডাঙ্গী হাসপাতালে নিয়ে যাই।
পরে সেখান থেকে দুপুর ১টায় ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ফাহিম আমাদের জানান, এ ধরণের রোগী সচরাচর বাঁচে না। তাই গফুরের ইচ্ছায় তাকে বাড়িতে ফেরত নিয়ে যাই। সেখানে পৌঁছানোর পর বিকেল ৩টায় গফুর মারা যান।’
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. ফাহিম বলেন, ‘রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তারপরও আমরা তাকে ভর্তি করতে বলেছিলাম। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে কেন তাকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো, বিষয়টি আমাদের জানা নেই।’
এদিকে মাত্র এক হাজার টাকার জন্য প্রকাশ্যে মারপিট করার কারণে ও আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে যুবলীগ নেতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে গফুরের পরিবার ও প্রতিবেশীরা।
এ বিষয়ে জানতে যুবলীগ নেতা জমির উদ্দীনের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জমির উদ্দীন দুওসুও ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সভাপতি। তথ্যটি নিশ্চিত করে ওই ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম বলেন, ‘মারপিটের ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আসলাম জুয়েল বলেন, ‘বিষয়টি জানতাম না। ঘটনা সত্য হলে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বালিয়াডাঙ্গী থানার পরিদর্শক হাবিবুল হক প্রধান বলেন, মুঠোফোনে জানার পরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply