গাজিপুরে শত কোটি টাকা প্রতারণা, প্রতারকের সাথে ডিমলার মামুনের সম্পৃক্ততা : ডোমারেও ৬ কোটি প্রতারণা
Published on Sunday, January 10, 2021 at 3:18 pm
স্টাফ রিপোর্টার : নীলফামারীর ডোমারের নারীদের সম্পৃক্ত করে ৬ কোটি টাকার অধিক প্রতারণার ঘটনা পরিকল্পিত বলে এখন বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে। ঘটনার অন্তঁরালে থাকা ঘটনার অনুসন্ধানে এমনটিই বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। ডোমারের ঘটনার সুত্র ধরে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে জানা গেছে, ডোমারের ৬ কোটি টাকা প্রতারণার ঘটনায় জড়িত মাহবুব ও শাকিল ঢাকার গাজিপুরে কনসালটেনসি এন্ড আউট সোর্সিং লিঃ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলে মাত্র ৪০/৪৫ দিনের মধ্যেই প্রায় ৩ হাজার নারীদের নি:স্ব ও সর্বশান্ত করে এক লক্ষ পয়তাল্লিশ কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে পালিয়ে যায় এই প্রতারকরা। এ ঘটনায় গেল বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী এক নারী বাদী হয়ে মেট্রোপলিটন টঙ্গী পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৩ জন প্রতারক গ্রেফতার হলেও অন্য তিনজন প্রতারক মাহবুব, শাকিল ও দুলাল পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গাজিপুরের আল-আমিন শরিফ নামের এক যুবক তার মায়ের খোঁয়া যাওয়া টাকা উদ্ধারে প্রতারক মাহবুব এর ফেসবু
ক ফ্রেন্ড লিষ্টে থাকা ডিমলার মামুনকে মাহবুবের ঘনিষ্ট বন্ধু মনে হলে ২৮ সেপ্টেম্বর শত কোটি টাকা প্রতারণার ঘটনার কথা মুঠোফোনে খুলে বলেন ডিমলার মামুনকে। এ সময় মামুন আশ্বস্ত করেন আমি মাহবুবের খোঁজ খবর পেলে জানাবো। এক সময় ডিমলার মামুন তাকে জানায় শাকিল ও মাহবুব কক্সবাজারে আছে।এদিকে মাহবুব ও শাকিলকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে আবারও প্রতারণার ফাঁদ পাতেন ডিমলার মামুন ও ডোমারের আদম সূফী। রাজশাহী বাগমারার মাহবুব, বগুড়া কাহালুর শাকিল, ডিমলার মামুন ও ডোমারের আদম সূফীর পরিকল্পনা অনুযায়ী নীলফামারীর ডোমারে সমিতির আঁড়ালে কোম্পানী খুঁলে আবারও প্রতারণার কৌশল বের করেন প্রতারক চক্র দলটি। এবং পরিকল্পিত ভাবেই প্রতারণার
মাধ্যমে ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আবারও গাঁ ঢাকা দেয় প্রতারক চক্রের এই চার সদস্য। এদিকে গাজিপুরের আল-আমিন শরিফ’র বিশ্বাস অর্জন করতেই মাহবুব ও শাকিল মামুনের সাথে থাকলেও প্রতারক মাহমুদুল হাসান মামুন তার ফেরিফাইড ফেসবুক ‘`Bwdb Mamun'' পেজে গাজিপুরের ঘটনার আটদিন পর ৪ অক্টোবর একটি স্টাটাস পোষ্ট করেন। যা হুবহুব তুলে ধরা হলো-“মাহবুব স্যার রাজশাহীর বাগমারা দয়া করে আমার সাথে একটু যোগাযোগ করেন অতীব জরুরী” এই স্টাটাসটা দেখে আল-আমিন আশ্বস্ত হয় এবং ডিমলার মামুন আল-আমিনকে জানায়, শাকিল ও মাহবুবের খোঁজ পেলে আমি জানাবো।
আল-আমিন আরো জানায়, মাহবুব ও শাকিলের বিষয়ে গাজিপুরের ঘটনা তুলে ধরে তাদের সন্ধান চেয়ে আমি যখন ডিমলার মামুনের সাথে যোগাযোগ করি। তখন প্রতারক মামুন আমাকে জানায় শাকিল ও মাহবুব কক্সবাজারে আছেন। কিন্তু সরষের ভিতরেই যে ভুঁত তাতো আমি বুঝতে পারিনি। কিন্তু আসলে তারা গাঁ ঢাকা দিয়ে ডিমলায় মামুনের বাসায় ও স্বপ্ন সমবায় সমিতির অফিসে অবস্থান করতেন ঐ সময়ে বলে আমি পরে ডোমারের ঘটনা পড়ে জানতে পারি। ঘটনার এক মাসের মধ্যেই আল-আমিন সীমান্তটাইমস ২৪ ডট কম অলনাইন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর পড়ে জানতে পারে ডিমলার মামুনের সাথে থেকেই নীলফামারীর ডোমারে তারা আবারও প্রায় ৬ কোটি টাকা প্রতারণা করে গাঁ ঢাকা দিয়েছে । ডোমারে মাহবুব ও শাকিলের প্রতারণার খবর দেখে আল-আমিন সীমন্ত টাইমস ২৪ ডট কম এর সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত কথা খুলে বলেন। তিনি বলেন, আমার মা শরিফা বেগম ৩ লাখ টাকা দেয় শাকিল ও মাহবুবের কোম্পানীতে। আমি বৃহস্পতিবার যাই কোম্পানীতে ভিজিট করতে। আমার সুবিধার মনে হয়নি। ফলে একদিন পর শনিবার টাকা ফেরত নিতে গেলে গিয়ে দেখি তারা পালিয়ে গেছে। আল-আমিন শরীফ জানায়, তাদের পলিসিটাই হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে পালিয়ে যাবে। এ সময়ের মধ্যেই তারা নারীদের লোভনীয় অফার দিয়ে কর্মী বানিয়ে এসব প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে।
এদিকে ডোমারের ভুক্তভোগী নারীদের বিশ্বাস গাজিপুরের পরে ডোমারে পরিকল্পিত ভাবেই প্রতারণার ছক তৈরী করেছেন তারা। এই বিষয়ে আরো অধিকতর কিছু জানতে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬০০ টাকা হারিয়ে দিশেহারা ভুক্তনারী ডোমারের ছোটউতা গ্রামের আব্দুল বাসেদ এর কন্যা তানজিলার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা হলে তিনি জানায়, আমি ডোমারের আদম সূফীর সাথে যোগাযোগ করে টাকা উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা টাকা দিবে না। প্রায় আধ ঘন্টা মুঠোফোনে কথা বলে জানতে পারি ডিমলার মামুন ভাই মাহবুব ও শাকিলকে নিয়ে এসেছে। আদম সূফী তাই জানিয়েছে আমাকে। আদম সুফী আরো জানিয়েছে ডিমলার মামুনের বাসাতেই তারা থাকতো। শাকিল ও মাহবুবকে চিনতো না আদম সূফী বলে জানিয়েছে সুফী। ডিমলার মামুনেই তাদেরকে ডোমারে নিয়ে এসে সমিতিতে কাজে লাগায়, সূফী নাকি তখন কিছু বুঝতে পারেনি ডিমলার মামুন এমন করবে। তানজিলা জানায়, সমিতির আঁড়ালে তারা প্রতারণার অভিনব কৌশল বের করে অল্প সময়েই ৬ কোটির অধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে এখন গাঁ ঢাকা দিয়েছে তারা সবাই। কিন্তু বিভিন্ন নম্বর দিয়ে তারা ফোনে যোগযোগ রাখছে আমরা কি করছি তা জানার জন্য। তাছাড়া আমরা তো কেউ প্রতারক শাকিল ও মাহবুবকে চিনতাম না। এটা পরিকল্পিত ভাবেই তারা ঘঁটিয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতারক চক্র দলটি তাদের প্রতারণা ঢাকতেই স্থানীয় ভুক্তভোগী নারী নাজমা ও তার সন্তানকে অপহরণও করেছে। এখন পর্যন্ত তারা নাজমা ও তার সন্তানকে ফিরে দেয়নি। এ ঘটনায় নাজমার স্বামী বাদী হয়ে কোর্ট এ মামলা করেছে। প্রতারক চক্র দলের সদস্য প্রতারক মামুন, আদম সুফী, মাহবুব ও শাকিল আমাদের প্রায় সহস্রাধিক নারীকে নি:স্ব করে সর্বশান্ত করে এসব নারীদের সংসার জীবনে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ভুক্তভোগী নারী তানজিলা, রাফিয়া সুলতানা, লাবনী আক্তার, মারুফা বেগম, হাসিনা আক্তার, উম্মে হাবিবা, ও মোমিনা বেগমসহ শতশত সর্বশান্ত হয়ে যাওয়া ভুক্তভোগী ‘নারীরা জানান, কিছুতেই প্রতারকদের ছেড়ে দিবো না। আমরা টাকা উদ্ধার করেই ছাড়বো। তারা আরো জানায়, আমাদের ৬ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়ে এখন বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করছে সেই টাকা দিয়েই প্রতারকরা। আর আমরা যাতে মামলা করতে না পারি সে জন্য অনেককে বিভ্রান্ত করছে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের দ্বারা। কিন্তু আমরা অবিচল। তারা কিছুতেই ছাড় পাবে না। খুব শিঘ্রই আইনী লড়াইয়ে টাকা উদ্ধারে মামলা করবো আমরা।
উল্লেখ্য, অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া নাজমা ও তার সন্তানের সাথে ডিমলার মামুনের রেস্তোরায় বসে খাওয়ার টেবিলে ও দুজনের এক সাথে অন্তরঙ্গ ছবি, প্রতারণায় সম্পৃক্ততার অনেক অডিও রেকর্ডিংসহ নানা তথ্য উপাত্ত এসেছে সীমান্তটােইমস ২৪ ডট কম অনলাইন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টারের হাতে । ডোমারে ৬ কোটি টাকা প্রতারণার ঘটনায় আরো খবর জানতে চোখ রাখুন এই অনলাইন পত্রিকায়।
Leave a Reply